শিলিগুড়ি, ২৭ ফেব্রুয়ারি: বারবার কন্যা সন্তান হওয়ায় মুখ ও বধির বধূকে দুই সন্তানসহ শিলিগুড়ির পথে ফেলে বেপাত্তা হয়ে গেল স্বামী। অচৈতন্য অবস্থায় ওই বধূকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হল শিলিগুড়ি হাসপাতালে। এ ব্যাপারে কয়েকটি সমাজসেবী সংগঠন এগিয়ে এলেও ফের বিপাকে পড়েছেন তারা। এখনো জ্ঞান ফেরেনি বধূর। শিলিগুড়ি হাসপাতালে দুই কন্যা সন্তানও অসহায় অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের বয়স মাত্র ৫ মাস। অন্য সন্তানের বয়স দেড় বছর। ছোট সন্তান মায়ের জন্য জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছে। ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে না। মায়ের বুকের দুধ না পেয়ে দিনভর কান্নাকাটি জুটছে। স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসক এই শিশুটিকে নিয়ে বিপাকে। তাদের কথা জানতে পেরে এগিয়ে এসেছে ইউনিক ফাউন্ডেশন ও আরো দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কদিন থেকে তারা হাসপাতালেই। বৃহস্পতিবারও যায়। বধূকে নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে চাইছে। ডিসচার্জ মিলেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে গত মঙ্গলবার প্রধান নগর থানার টি অকশন রোডে অল্পবয়সী এই বধূ রাস্তার পাশে পড়ে ছিল। তাকে এমন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা খবর দেন একটি সংস্থাকে। তারা এসে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে আসে দার্জিলিং জেলা লিগাল এইড ফোরাম। সোনাদা থেকে প্যারা লিগাল এইড সদস্য প্রীতি থাপা আসেন। শিলিগুড়ি ইউনিক ফাউন্ডেশনের শক্তি পাল, সদস্যা মীরা নাথও আসেন। এছাড়া ছিলেন এক সমাজকর্মী ডালিয়া রায়। তারা বলেন, মহিলাকে সম্ভবত তার স্বামী পানীয়র সঙ্গে জোর করে মাদক মিশিয়ে খাওয়ায়। এরপর পাশাপাশি হাতে মাদক ইনজেকশন দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মহিলা প্রথমে একটু হুশ ছিল। তখন ইশারায় বিষয়টি বুঝিয়েছিলেন। তখন বোঝাতে চেয়েছিলেন বোতলের জলে কিছু আছে। কিন্তু মাদকের মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারপরই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, এই মহিলার বাড়ি বিহারে।শিলিগুড়িতে তার স্বামী নিয়ে আসে। এক বছর আগে এই মহিলাকে ও তার স্বামী সোনাদায় ভাড়া থাকত বলে জানা গেছে। সেখানেও স্বামী তার স্ত্রীর ওপর অত্যাচার চালাতে। একটা সূত্র থেকে জানা গেছে, মহিলার আগেও দুই সন্তান হয়েছিল। তারা মেয়ে বুঝতে পেরে সেই সন্তানদের গর্ভবস্তায় পেটে থেকেই স্বামী নষ্ট করে দেয়! পরে দুই সন্তান মেয়ে হওয়াতে মারধরের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল।
এদিকে মুখ ও বধির হওয়ায় বেশি কিছু বলতে পারত না। এবার শিলিগুড়িতে ঘুরতে নিয়ে আসার নাম করে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় স্বামী। এ ঘটনায় প্রধান নগর থানায় পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এদিন সমাজকর্মী ডালিয়া দেবী বলেন, শিলিগুড়ির ওই আইনি সহায়তা দেওয়ার সংস্থাটি একবার এসে আর যোগাযোগ করেনি। ফলে বধূকে নিয়ে যেতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। সিনির সদস্যরা এসেছিল। কিন্তু এই দুই সন্তানকে নিতে আইনি জটিলতা রয়েছে। তাই নেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা বাড়ছে। আমরা চাই প্রথমে মহিলা সুস্থ হয়ে উঠুক। শিলিগুড়ি হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মন্ডল বলেন, এখানে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রেফার করা হয় মেডিক্যালে।
©গিরিশ মজুমদার