শিলিগুড়ি: মানুষটা একটু খিটখিটে। রস নেই মুখে। তাই অনেকে বিরক্তি বোধ করেন। পসন্দ করেন না। অথচ সেই মানুষটি যেন এখন সব ভুলিয়ে দিয়েছে। কেউ বিপদে রয়েছে জানতে পারলে ছুটে আসেন। কাউকে দিয়ে খোঁজ নেন। পাড়ায় যখন অন্য এলাকার থেকে এসে জ্বরে আক্রান্ত কেউ। এলাকার মানুষ ভয় পাচ্ছেন, আতঙ্কিত হচ্ছেন। পুলিশকে বারবার ফোন করলেও যখন দায় এড়াচ্ছে। যখন থানা, এম্বুলেন্স ফোন তুলছেনা। গ্রামের নেতাদের জানানোর পরও তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তখন কিন্তু এই মানুষটি জানতে পারলে এগিয়ে আসেন। নিজে থানায় ফোন করে গাড়ি পাঠাতে বলেন। পাঠিয়ে দেন এম্বুলেন্সও।আবার যখন কোথায় লকডাউন অমান্য করে আড্ডা মারছে। কেউ কথা না শুনলে যিনি ব্যবস্থা নেন তিনি গৌতম দেব। নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর সহ আরও দুটি নম্বর দিয়ে রেখেছেন নিজের সোশ্যাল সাইটে। ফোন করার জন্যই।
এটা ছোট ব্যাপার হয় তবে সকাল থেকে রাত কখন ছুটে বেড়িয়েছে ভুলে গেছে খাওয়া-দাওয়া সব। নিজের শরীরের কথাও। একপ্রকার জীবনকে বাজি রেখেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। কখনো হাসপাতাল, কখনো নার্সিংহোম, আবার অভুক্ত মানুষের হাতে খাবার পৌঁছে দেওয়া। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছেছেন খাবার। কোথায় করোনা আক্রান্ত ছিলেন সেই এলাকায় গিয়ে মানুষকে অভয় দিয়ে আসছেন।আক্রান্তের চিকিৎসার জন্য জায়গা দেখা, কোয়ারেন্টিন সেন্টার খোলা। তার আবার বিরোধিতা করলে নিজে গিয়ে সামাল দিচ্ছেন। সারাদিনে একাধিক বৈঠক করে মানুষকে পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন। কখনো চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী কখনো বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বসে শুনছেন কথা। সব ক্ষোভ বিরোধ ভুলছেন। এসব তাহলে।
বয়স হয়েছে ৬২ বছর। বছরখানেক আগে ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। কিন্তু এই মানুষটিই এখন যেন শিলিগুড়ির ভরসা।প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছেন একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত। তিনি মন্ত্রী ঠিকই কিন্তু রক্ত মাংসে গড়া একজন মানুষ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নিজে ছুটছেন। রাজ্য সরকার ১০০ শতাংশ দিয়ে রাজ্যবাসীর জন্য কাজ করছেন। কেন্দ্র রাজ্যের বিরোধ ভুলছেন এই কঠিন পরিস্থিতিতে। করোনার জেরে রাজ্যের কোনো যেন মৃত্যু না হয়, এটাই প্রার্থনা। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আগে কোনও দিন লড়েনি। চিকিৎসা নেই। পরিকাঠামোও তাই সীমিত। তারই মধ্যে লড়াই করছেন। এইরকম পৃথিবী তথা দেশের ভয়াবহ অবস্থার মোকাবিলা করার জন্য কোনো দেশের সরকার বা রাজ্য সরকার প্রস্তুত ছিল না! পৃথিবীর ২ য় স্বাস্থ্যপরিষেবায় ইতালি কিন্তু সেখানে মৃত্যু মিছিল অব্যাহত! সবাই মিলে পরস্পর সহোযোগীতার মাধ্যমে এই ভয়ানক পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। একটাই বার্তা তার।
নিজের মেয়ে ডাক্তার। করোনার পরিস্থিতিতে প্রতিদিন যান ডিউটিতে। মেয়েকে আটকাননি তিনি। বরং বলছেন নিজের কাজ করে যাবে। একবছর আগে ওপেন হার্ট সার্জারি হলে ডাক্তার বলেছেন, রেস্ট নিতে। ভারী কাজ না করতে। সব যেন ভুলেই গেছেন এই মানুষটি করোনার ঝড়ে। নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে, সবাইকে বলছেন, আমাদের সাথ দিন, প্লিজ ঘরে থাকুন। সবাই ভালো থাকুন।
©গিরিশ মজুমদার