উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি ছিলেন কালিম্পং এর বাসিন্দা

শিলিগুড়ি, ৩০ মার্চ: উত্তরবঙ্গে প্রথম করোনা পজিটিভ ধরা পড়া সেই কালিম্পং এর বাসিন্দা মহিলার। করোনার কাছে হেরে গেলেন তিনি। শনিবার ধরা পড়েছিল পজেটিভ। রবিবার শেষ রাতে মারা গেলেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর রাত প্রায় ২ টায় “রিকু” বিভাগে প্রাণ হারান ৪৫ বছরের মহিলা। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুপার কৌশিক সমাজদার বলেন, “ভর্তি কালিম্পং এর সেই রোগীর রাত দুটো নাগাদ মৃত্যু হয়। বাঁচানোর যাবতীয় চেষ্টা করা হয়েছিল। বাঁচানো গেল না।”
এই ঘটনায় বাড়ছে উদ্বেগ। এই মহিলার মৃত্যুতে রাজ্যে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ালো ২। আর উত্তরবঙ্গে প্রথম মৃত্যু।
উল্লেখ্য, ভিনরাজ্য এবং বিদেশের সঙ্গে যাতায়াত ছিল মহিলার। কিছুদিন আগে তিনি চেন্নাই থেকে উত্তরবঙ্গে ফেরেন। তারপরে জ্বর, সর্দি সহ করোনার লক্ষণ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এসে পরীক্ষা করেন। গত ২৬ মার্চ তিনি ভর্তি হন। শনিবার রাতে জানা যায় ওই মহিলার করোনা পজেটিভ। তারপরেই শুরু হয়ে যায় তোড়জোড়। বাড়তে থাকে উদ্বেগ। রিপোর্ট আসার আগে পর্যন্ত মহিলার গতিবিধি এবং তিনি কতজনের সংস্পর্শে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে এসেছিলেন তারই চলছে খোঁজ।
জানা গেছে ওই মহিলা গত ৭ মার্চ তার মেয়েকে চিকিৎসার জন্য চেন্নাই নিয়ে যান। তারপর সেখান থেকে তারা ফেরেন গত ১৯ মার্চ। একটি বেসরকারি বিমানে বাগডোগরা বিমানবন্দর নামেন। সেখান থেকে তাদের নিজের গাড়ি করেই শিলিগুড়ির জ্যোতিনগরে এক আত্মীয়র বাড়িতে আসেন। সেখানে আধাঘন্টার মতো থাকেন। ওই গাড়ি করেই এরপর চলে যান কালিংপং নিজের বাড়িতে। সেখানে ২০ মার্চ স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করান। কফ-সর্দি-কাশি থাকায় এরপর ২৬ মার্চ আবার ওই গাড়ি করে শিলিগুড়ির ওই আত্মীয়র বাড়িতে এসে ওঠেন। সেখান থেকে শিলিগুড়ির একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিটিস্ক্যান ও এক্স-রে করানো হয়। রিপোর্ট পাওয়া যায় তারপরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কোভিড ক্লিনিকে দেখানোর পর ভর্তি হন বলে জানা গেছে।
উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয় ইতিমধ্যে ওই মহিলার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন কালিম্পং এর বাসিন্দা ছয় জন। তাদের হোম কোয়ারান্টিনে রাখা হয়। কিন্তু তার মাঝে তিনি অনেকের সংস্পর্শে এসেছেন বলে জানা গেছে। যেমন রয়েছেন যে গাড়িতে করে চলাফেরা করেছেন সেই গাড়ির চালকও। শিলিগুড়ির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বোতল কোম্পানি সংলগ্ন জ্যোতিনগরের এক বাসিন্দা ওই মহিলার আত্মীয় এক পরিবারের লোকেদের পরীক্ষা তথা স্ক্রিনিং করে হোম কোয়ারান্টিনে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। খোঁজ চলছে গাড়ির চালকের। শুধু তাই নয় এই আক্রান্ত ওই মহিলা শিলিগুড়ির এক ডাক্তারের কাছে আগে পরীক্ষা করেন। সেই ডাক্তারকেও হোম কোয়ারান্টিনে গিয়েছেন বলে জানা গেছে। ওই চেম্বারও বন্ধ। কালিম্পং এ একটি নার্সিংহোমে বসছেন ওই চিকিৎসক। তিনি জানার আগে এতদিন অনেক রোগীকে দেখেছেন। তারাও আবার তাদের পরিবারের সঙ্গে মিশেছেন। ঘোরফেরা করছেন। রোগের নিয়মমাফিক তাদেরকেও খোঁজ করে নজরে রাখা দরকার। এদিকে ওই আক্রান্ত ওই মহিলা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করছেন কিনা দেখা হচ্ছে।পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগে কোন নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীর সংস্পর্শে আসেন কিনা শুরু হয়েছে তারও খোঁজ।
এতদিন উত্তরবঙ্গে কোনও আক্রান্তের খোজ না মেলায় কিছুটা নিশ্চিন্ত ছিল পরিসেবার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ রেস্পেটরেটরি কেয়ার ইউনিটের থাকা মহিলার সোয়াবের নমুনা পরীক্ষায় মারণ ভাইরাসের জীবাণু মিলে।
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, ওই মহিলা ভীণ রাজ্য থেকে জীবাণু বহন করে আনতে পারেন। কিংবা বিমানের অন্য যাত্রীদের থেকেও ছড়াতে পারে। তাই চেন্নাই থেকে ফেরার সময় এবং পরে তিনি কোথায় গিয়েছেন বা কাদের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন তারও খোজখবর শুরু করবে। পরিবারের সদস্যদের পরীক্ষা করা ও তথ্য জিঞ্জাসা করতে হয়। পাশাপাশি মেডিক্যালে আক্রান্ত মহিলা প্রথম যেদিন কোভিড ক্লিনিকে এসেছিলেন সেদিন কোন ডাক্তার রোগিনীকে দেখেছিলেন, আশেপাশে কারা ছিলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ওই রোগীনি যে বিমানে এসেছিলেন এবং কারা পাশে ছিলেন সেসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এদিকে এত অল্প সময়ে মহিলার মৃত্যু নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।

© গিরিশ মজুমদার