শিলিগুড়ি, ১৩ মার্চ: করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যাতায়াত বন্ধ এবার। করোনা ভাইরাস যাতে না ছড়ায় সেই কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার ভিসা বন্ধ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক থেকে তা জানিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভিসা নিয়ে রাখা যাত্রীরা ভারতে আসতে পেরেছেন। এরপর সীমান্ত সিল করা হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের থেকে কোনও পর্যটক ১৫ এপ্রিলের আগে ভারতে আসতে পারবেন না। তবে বাংলাদেশে গিয়ে যে সমস্ত ভারতীয় আটকে রয়েছেন তারা ফিরতে পারবেন। শুধু কূটনৈতিক, অফিসিয়াল, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পের বিশেষ ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে ঢুকতে পারবেন। এই নির্দেশিকা দিল্লির ব্যুরো অফ ইমিগ্রেশন থেকেও সীমান্তের অভিবাসনকেন্দ্রগুলিতে পাঠানো হয়েছে। শিলিগুড়ির কাছে ফুলবাড়ি সীমান্তেও নির্দেশিকা মতে এদিন থেকেই কার্যকরি শুরু হয়ে গেছে। একইভাবে নির্দেশিকাতে উত্তরবঙ্গের আরও তিনটি সীমান্ত অভিবাসনকেন্দ্র কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা, মালদার মহেদিপুর, বালুরঘাটের হিলিতেও রয়েছে। এছাড়া বসিরহাটের গোজাডাঙ্গা, উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রোপোল ও নদীয়ার গেঁদেতেও এই নির্দেশিকা। উত্তরবঙ্গের আরও দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। ভুটান সীমান্তের জয়গাঁ ও নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কিতে চেকপোস্ট রয়েছে। ইতিমধ্যে জয়গাঁ দিয়ে ভুটানে বিদেশি নাগরকিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নেপালেও শুক্রবার থেকে আবার সেদেশের সরকারে ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া আপাতত বন্ধ রেখেছে। ফলে উত্তরবঙ্গের ৭টি আন্তার্জাতিক সীমান্তে একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ যাত্রী ও পর্যটক যাতায়াত করতেন। এখন বাংলাদেশ থেকে আসা বন্ধ হয়ে গেল। এদিকে চিকিৎসা, ঘুরতে কিংবা বেড়াতে আসা পর্যটকরা দেশে ফিরে যেতে তৎপর হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতে ভারতে থেকেও বাংলাদেশেও কম যাচ্ছেন যাত্রীরা। এখানে বাণিজ্য নিয়ে কোনও নির্দেশিকা না আসায় তা চলছে। তবে যে কোনও মুহর্তে নির্দেশিকা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
দক্ষিন দিনাজপুরের বালুরঘাটের চিত্র একই বিদেশ মন্ত্রকের নির্দেশে এদিন সকাল থেকেই বাংলাদেশে যাবার জন্য উপচে পড়ে ভিড়। এই অচলাবস্থায় ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা। হিলি এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোশিয়েশনের পক্ষে জানানিয়েছে, বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এখনও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশিকা আসেনি। এরমধ্যেই পতিরাম হিলি জাতীয় সড়কে শতাধিক লরিতে করে মালপত্র নিয়ে বাংলাদেশে রপ্তানীর জন্য অপেক্ষা করছে। দুশ্চিন্তায় রয়েছে এক্সপোর্টার্স সংগঠনও। এই নিষেধাজ্ঞায় যাত্রী পরিবহণে এবং মুদ্রা বিনিময় ব্যবসায় যথেষ্ট ক্ষতি হবে বলে দাবি। যদিও পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে এখনই কোনো বিধিনিষেধ নেই।
এদিকে সকালে শিলিগুড়ির বিধান মার্কেটে দুই ইউক্রেনের নাগরিককে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন এলাকাবাসীরা।
তারা কোথা থেকে এসেছেন, কোথায় গিয়েছিলেন, তা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন বাসিন্দারা। জানতে পারেন তারা ভুটান হয়ে নেপাল গিয়েছিলেন। নেপালে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং আইসোলেশনে রাখার কথা বলা হলে সেখান থেকে ভারতে চলে আসেন। শিলিগুড়িতে বিদেশি নাগরিক দেখে জল্পনা শুরু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ির পুলিশ। এরপর ওই দম্পতিকে নিয়ে যাওয়া হয় শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তার প্রাথমিকভাবে তাঁদের কিছু চিকিৎসা করেন। পুলিশ সূত্রে জানা এছে, তাদের এদনিই বিমান রয়েছে। তাই পরীক্ষায় কিছু না পাওয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌছে দেওয়া হয়। এদিকে করোনার ভাইরাস নিয়ে খড়িবাড়ি থানা পুলিশের তরফে বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক অভিযান শুরু হয়েছে।
©গিরিশ মজুমদার