সামান্য পড়ে গিয়ে ছাত্রের মৃত্যু! মানতে পারছেন না

শিলিগুড়ি, ২০ নভেম্বর: সামান্য পরে গিয়ে মৃত্যু! মানতে পারছেন না কেউ। পরিজনেরা বলছেন, বড় কিছু স্কুলে হয়েছে। তাই স্কুল লুকাচ্ছে। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি উঠছে। স্কুলে গিয়ে রহস্যমৃত্যু হল কেজি পড়ুয়া এক শিশুর। মাত্র ৬ বছর বয়সী ওই পড়ুয়ার নাম অভিগ্ন গৌতম। বুধবার স্কুল চলাকালীন এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। অভিগ্ন বাগডোগরা এলাকার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ত। ওর বাড়ি বাগডোগরার পুঁটিমারি এলাকায়। বাবা জগন্নাথ গৌতম বেলগাছি হিন্দি হাই স্কুলের শিক্ষক। এদিন সকালে প্রতিদিনের মতো ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসা হয়। বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ ছেলের স্কুল থেকে ফোন করে জানানো হয়, অসুস্থ হয়ে পড়েছে আপনার ছেলে, স্কুলে আসুন। বাবা স্কুলে রওনা হন। কিছুক্ষণ পর আবার স্কুল থেকে জানানো হয় আপনার ছেলেকে মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে চায়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিশুটির বাবা ব্যাকুল হয়ে বার বার জানতে চেয়েছিলেন, ছেলে ঠিক আছে তো, ওর জ্ঞান আছে তো? কিন্তু স্কুল থেকে এনিয়েও কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। শেষে তিনি ওই নার্সিংহোমে গিয়ে দেখেন ছেলের মৃত্যু হয়েছে। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন বাবা মা। পরিজনেরা স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। চূড়ান্ত গাফিলতিতেই এই মৃত্যু বলেই তারা জানান। এনিয়ে এদিন স্কুলে গিয়েও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তারা। বাগডোগড়া থানায় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করে গেছে। অন্য অভিভাবকদেরও মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন। কীভাবে এতছোট ছেলেটি মারা গেল তা নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট কিছু তাদের জানাচ্ছেন না। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, একেক সময় একেক কথা বলা হচ্ছে। কখনও বলা হচ্ছে বাথরুমে গিয়ে পড়ে গিয়ে নাকি অভিগ্ন আঘাত পায়। তারপর ওকে প্রথমে বাগডোগরা হাসপাতাল এবং সেখান থেকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পরিবারের অভিযোগ ভিন্ন। তারা বলছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর কারণ গোপন করছেন। ছেলেকে মারধর করারও অভিযোগও উড়িয়ে দিচ্ছেন না পরিজনেরা। বড় কোনও আঘাত না পেলে শুধুমাত্র বাথরুমে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হতে পারে না। শিশুরা এমন খেলতে খেলতে অনেক সময় পড়ে যায়। তাতে কিছু হয় না। তাই এমন মৃত্যু নিয়ে তদন্ত চেয়েছেন তারা। এমন ঘটনায় সরব হয়েছেন অন্য স্কুলের শিক্ষকেরাও। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি সুপ্রকাশ রায় বলেন, ‘‌স্কুলের গাফিলতি রয়েছে এখানে। মৃত্যু নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। যদি ওই পড়ুয়া বাথরুমে গিয়ে পড়ে গিয়ে থাকে তাহলে তাকে আয়া, কিংবা মাসি ছাড়া কেন ছাড়া হল?‌ গাফিলতি থাকলে স্কুলের অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়া দরকার।’‌ গার্জিয়ান ফোরাম অফ নর্থবেঙ্গল থেকেও স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। ফোরামের সভাপতি সন্দীপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‌এই ধরণের মিশনারি স্কুলগুলি টাকা ছাড়া কিছু চেনে না। সন্তানদের পাঠিয়ে ভরসা পাওয়া যায় না। বহু এমন ঘটনা ঘটেছে এই সমস্ত স্কুলে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস স্কুলের চূড়ান্ত গাফিলতিতে এইটুকু শিশুর প্রাণ গেল। আমরা ঘটনায় শোকাহত।’‌ স্কুলের সিস্টার শেরনী বলেন, ‘‌টিফিন খেয়ে ও বাথরুমে হাত ধুঁতে গিয়ে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ওকে হাসপাতাল হয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গাফিলতির অভিযোগ ঠিক নয়।’‌ বাগডোগরা থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।