শিলিগুড়ি, ২ মার্চ: বাদশা সিনেমাতে দেখা দিয়েছিল শাহরুখ খানকে একটি কালো চশমা পড়তে। যেই চশমা পড়লে মানুষকে বস্ত্রহীন অবস্থায় দেখা যেত। শিলিগুড়িতে তেমনই গল্প ফেঁদে মোটা টাকায় চশমা বিক্রির প্রতারণা চক্র। প্রাচীন চশমা দেখিয়ে অভিনব প্রতারণার ফাঁদ পেতেও লাভ করতে পারল না। এই চশমাও চোখে দিলে নাকি এক্স–রের মতো কাজ করে। শরীরের পোশাক এমনকী ভেদ করে হাড় পর্যন্ত পৌঁছে যায় দৃষ্টি। আর সেই চশমা ঘিরেই শোরগোল পড়ে যায় শহরে। প্রথমে স্থানীয়রা টের পেয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে বাজেয়াপ্ত করে ওই চশমাটি। এই ঘটনায় একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, প্রাচীন চশমার নাম করে এই প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছিল। আদতে পেতলের ডিজাইন করা আতষ কাঁচের এই চশমা। বিক্রি করতেই এসেছিল কয়েকজন।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের লেখা দেখিয়ে অদ্ভুত চশমা ঘিরেই চাঞ্চল্য। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলের নথি বানিয়ে চশমা বিক্রি করে প্রতারনার চেষ্টা করে তারা। গত রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের নিউ জলপাইগুড়ি থানার ভালোবাসা মোড়ের পাসকেলগুড়ি এলাকায়। উদ্ধার হয় অদ্ভুত দেখতে একটি চশমা। সঙ্গে ব্রিটিশ আমলের নথি। এই খবর হেডলাইন নিউজে প্রকাশিত হয়। পাঠকদের মনে প্রশ্ন জাগে। শেষে আমাদের টিম বিষয়টি খতিয়ে দেখে। তাতেই জাদু চশমার রহস্য ফাঁস হয়।
উল্লেখ, গত শনিবার বাসু দত্ত রায় নামে ফুলবাড়ির এক ব্যাক্তি পাসকেলগুড়ি এলাকায় জমি দেখতে আসেন। তখন স্থানীয় বাসিন্দা বাবু শর্মাকে তার বাড়ির একটি ঘর লেনদেন করা হবে বলে দুই ঘন্টার জন্য ভাড়া চায়। সেইমত রবিবার সকালে এক ব্যাক্তি প্যাকেটে করে চশমা আনেন। সঙ্গে বাসু দত্ত রায় ও চারজন বিদেশী ছিলেন। লেনদেনের কথা বাড়ির মালিক তার এক বন্ধুকে আগেই জানিয়েছিল। সেই বিষয়টি ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে। উৎসুক হয়ে কয়েকজন সে সময় বাড়িতে আসে। বিষয়টি বিদেশীরা লক্ষ্য করে সেখান থেকে সরে পড়েন। স্থানীয়রা বাড়িটি ঘিরে ফেলতে শুরু করলে বিপদ বুঝে চশমার বাক্স ফেলেই বাকি দুজনও পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে এনজেপি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে চশমাটি উদ্ধার করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক বাবু শর্মাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। চশমার বাক্স থেকে উদ্ধার হয় নথি। সেখানে লেখা রয়েছে চশমাটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের। কোথাও লেখা রয়েছে ১৮১৮ সালের আবার কোথাও রয়েছে ১৮৩৯ সালের। চশমাটির বিশেষত্ব হিসেবে লেখা রয়েছে চশমাটি পড়লে ১১ মিটার দুর থেকে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখ যাবে। এমনকি দেখ যাবে শরীরের হাড়গোড়ও। অথচ চশমাটি পড়ে কেউ তেমন কিছুই দেখতে পায় না। তাই স্থানীয়রা সহ পুলিশের অনুমান চশমাটি ভুয়ো হতে পারে। পুরোনো আমলের চশমা দেখিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারনার ফাঁদে ফেলার চক্রান্তের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তাই থানাতে এনে চোখে দিয়ে প্রাথমিক পরীক্ষা করা হয়। তাতে কিছুই মেলেনি। শুধু ঘোলা দেখা যায়। আতোষ কাছে কিংবা পাওয়ার যুক্ত চশমা পড়লে যেমন দেখা যায় তেমন। তাই তদন্তে দেখা গেছে পুরোটাই প্রতারণা চক্র প্রাচীন চশমা দেখিয়ে গল্প ফেঁদে বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছিল কেউ কেউ। সিনেমা কিংবা গল্পে যেমনটা দেখা যায় বাস্তবে তার উল্টো। কোন মিল নেই। বিষয়টি নিয়ে শেষে থানাতেই হাসির রোল পড়ে যায়। ছেড়ে দেওয়া হয় বাড়ির মালিককে। তবে পুলিশ এই চক্রকে ধরতে তদন্ত শুরু করেছে।
© গিরিশ মজুমদার