শিলিগুড়ি, ১৩ মার্চ: গ্রুপ-ডি পদের চাকরি বাতিলের তালিকায় নাম রয়েছে শিলিগুড়ির বাসিন্দা দিলীপ বিশ্বাসের। এভাবে চাকরি হারিয়ে ফেলায় মানসিক অবসাদে ভূগছিলেন তিনি। বাড়ি থেকে বাইরেও বেশি একটা বের হতেন না। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও বেশি কথা বলতেন না। সোমবার তার শিলিগুড়ির ভাড়া বাড়ি থেকে পুলিশ উদ্ধার করল মৃতদেহ। বিছানাতেই মশারি দিয়ে পেঁচিয়ে পড়েছিলেন তিনি। আর এরপরই শোরগোল পড়ে যায় এলাকায়। শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তির বাড়ি জলপাইগুড়ির দোমোহনির মরিচবাড়ি এলাকায় এখন শোকের ছায়া। ৪৬ বছর বয়সে চাকরি হারানো এবং তারপর অস্বাভাবিক মৃত্যু মানতে পারছেন পরিজনেরা। চাকরি চলে যাওয়ায় তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন নাকি অসুস্থতা জনিত কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা তদন্ত সাপেক্ষ বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানাগেছে, দিলীপ বিশ্বাসের চাকরি বাতিলের তালিকায় সিরিয়াল নম্বর রয়েছে ৩৬। তিনি তপসিলি শ্রেনীভুক্ত। ২০১৬ সালের মেমো নম্বরের ওই চাকরিতে নিয়োগ পান ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল। তিনি কোচবিহার জেলার দাড়িপাট্টানি জুনিয়র হাইস্কুলে গ্রুপ ডি পদে কর্মরত ছিলেন। সদ্য কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে গ্রুপ-ডি পদে চাকরি যায় রাজ্যের ১ হাজার ৯১১ জনের। তারমধ্যে দিলীপ বিশ্বাসও একজন। তার বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির মরিচবাড়ি এলাকায় হলেও তিনি শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে এখানেই থাকতেন তিনি। এখান থেকেই তিনি কর্মস্থলে যেতেন। এদিন ওই ভাড়া বাড়ি থেকেই তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ। আকষ্মিক মৃত্যুতে উঠতে থাকে নানা প্রশ্ন। পরিবারের কেউ কেউ মানুষিক অবসাদগ্রস্ত বলে জানান। তবে মৃত চাকরি হারানো ওই ব্যক্তির দাদা দীনবন্ধু বিশ্বাসের দাবি চাকরি চলে যাওয়ার পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ভাই। সম্ভবত এই কারণেই আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
পরিবারসূত্রে জানাগেছে, রবিবাক রাতে বুকে ব্যথা হচ্ছে বলে তিনি ফোনে এক বন্ধুকে জানিয়েছিলেন। তিনি তাকে চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শও দেন। এরপর সোমবার তাঁর বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করলেও সাড়া দেননি দিলীপবাবু। ওই বাড়িওয়ালাও জানান, তিনি কিছুই জানেন না। এরপরই চলে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলার প্রশান্ত চক্রবর্তী। তিনি পুলিশকে ডাকেন। সকলের উপস্থিতিতে এরপর ঘরের দরজা ভাঙতেই দেখা যায় মশারির সঙ্গে জড়ানো অবস্থায় রয়েছে দিলীপ বিশ্বাসের প্রাণহীন দেহ। কিন্তু কীভাবে তাঁর মৃত্যু হল তার, এনিয়ে রহস্য ঘোরালো হয়েছে। চাকরি চলে যাওয়ায় তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন নাকি অসুস্থতা জনিত কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা তদন্ত সাপেক্ষ বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে পুলিশ তার মৃতদেহ সোমবার ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ময়নাতদন্তের পর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যদিও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ তদন্ত সাপেক্ষ বলে জানিয়েছে পুলিশ। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলেই জানাযাবে কারণ। এদিকে দিলীপ বিশ্বাসের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে তার গ্রাম দোমোহনির মরিচবাড়ি এলাকাতেও।