শিলিগুড়ি, ১০ ডিসেম্বর: পরিবারের সবাই স্বাভাবিক উচ্চতার। অথচ দুটি পরিবারে দু–জন বামন। এই দুই বামনের বিয়ে হয়। সংসার পাতেন। তারপর স্বপ্ন দেখেন। তারপরই যেন সামনে আসে সেই লিলিপুটিয়ানের গল্প। এখানে স্বামীর উচ্চতা মেরেকেটে ৩ ফুট। স্ত্রীর উচ্চতা স্বামীর চেয়ে ২ ইঞ্চি বেশি। অনেকবার অসফল হওয়ার পর এই বামন দম্পতি জন্ম দিলেন এক সুস্থ সন্তানের। এমন দম্পতি’র জীবনের গল্প শুনে শিলিগুড়িরে এক নার্সিংহোমের চিকিৎসকদল নিলেন না কোনও টাকা পয়সা। শহরের আশ্রমপাড়ার স্বামীজি মোড়ের কাছে ওই নার্সিংহোম থেকে মঙ্গলবার ফুটফুটে পুত্র সন্তানকে নিয়ে ঘরে ফিরলেন সওরা খাতুন ও মহম্মদ নাজির। অভাবী সংসারে লটারি বিক্রি করে সবকিছু। তাই এই নার্সিংহোম শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সমস্ত খরচা বহন করেছে। তারা সন্তান চেয়ে স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পাশাপাশি নার্সিংহোমের ভূমিকাতেও খুশি তারা।
জলপাইগুড়ি জেলার হলদিবাড়ির বাসিন্দা মহম্মদ নাজির। তাদের দাম্পত্য জীবন ১০ বছরের। হলদিবাড়িতে লটারির দোকান চালিয়েই চলে সংসার। ২০০৯ সালে তাদের বিয়ে হয়েছিল। বাবা-মা এবং ভাই-বোন তারা সবাই স্বাভাবিক গঠন। অথচ দুটি পরিবারে দু–জন স্বল্প উচ্চতার। বামন হলেও আর পাঁচটা মানুষের মতোই তারা জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখেন। বিয়ের পর থেকেই মা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন সওরা খাতুন। কিন্তু তিন বারই গর্ভপাত হয়। ভেঙে পড়েছিলেন ওই দম্পতি। এরপর কোনওভাবে যোগাযোগ করেন শিলিগুড়ির ওই নার্সিংহোমে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলেন সওরা খাতুন। গত ৫ ডিসেম্বর এই নার্সিংহোমেই তিনি স্বাস্থ্যকর এক সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের সময় এই সন্তানের ওজন হয়েছে ২ কেজি ২০০ গ্রাম। চিকিৎসকদের দাবি, উত্তরবঙ্গে এটিই প্রথম ঘটনা। ওই নার্সিংহোমের পরিচালক তথা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ একে মাঝি বলেন, ‘আমার ৩০ বছরের পেশায় বামন দম্পতির ক্ষেত্রে এটি প্রথম ঘটনা। মহিলা এর আগেও তিনবার গর্ভধারণ করেছিলেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি। এই মহিলা ৮ মাস আগে এই নার্সিংহোমে এসেছিলেন। আমরাও তাই একে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করেছি। চিকিৎসাও শুরু করা হয়। কদিন আগে অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসব করানো হয়। শিশুর ওজন স্বাভাবিক, ২ কেজি ২০০ গ্রাম।’ নার্সিংহোমের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুবল দত্ত বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বোঝা গেছে, এই শিশুটি অন্য সাধারণ শিশুদের মতোই হবে।’
© গিরিশ মজুমদার