Home রাজ্য উত্তরবঙ্গ ফাঁসিদেওয়ায় রহস্যজনকভাবে কৃষক খুনে নানা প্রশ্ন উঠছে এলাকায়

ফাঁসিদেওয়ায় রহস্যজনকভাবে কৃষক খুনে নানা প্রশ্ন উঠছে এলাকায়

শিলিগুড়ি, ৬ ফেব্রুয়ারি:‌ জমির উপর দিয়ে গরু পাচারের প্রতিবাদ করেই কী খুন হতে হয়েছে ফাঁসিদেওয়ার কৃষককে?‌ এই প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে শিলিগুড়ি মহকুমার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তি গ্রামে। বুধবার রাতে জমিতে বেগুন তুলতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে খুন হন এক কৃষক। মৃত ওই কৃষকের নাম বিনয় বসু (৪৩)। তিনি ফাঁসিদেওয়ার ভক্তিনগরের বাসিন্দা। রাতে গোয়ালটুলি মোড় সংলগ্ন এলাকায় তার ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিজের জমিতেই দেহটি পড়েছিল। এই ঘটনায় আতঙ্ক ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। পুলিশের বিরুদ্ধে তাদের ব্যাপক ক্ষোভ। দিনের পর দিন বাংলাদেশে গরু পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচারকারীরা জমির ফসল মাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে গরু। এদিন পথ অবরোধ করে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন এলাকাবাসী। বলেন, পুলিশ কিংবা সীমান্তরক্ষী বাহিনী এসব দেখেও দেখে না। যদিও এদিন ওই এলাকায় গিয়েছে পুলিশের তদন্তকারী দল। সেখানে ছিল ডগ স্কোয়ার্ড। কিন্তু এখন পর্যন্ত খুনের কারণ কী জানতে পারেনি পুলিশ। যদিও ফাঁসিদেওয়া থানার পুলিশের দাবি, খুব শিগগির এই ঘটনার কিনারা হবে।
উল্লেখ্য গত ১৬ জানুয়ারি জমির ফসল তুলতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন এক কৃষক। ওই ঘটনাটি ঘটে ফাঁসিদেওয়ার জ্যোতি নগর এলাকায়। তার রেশ কাটেনি এখনও। ওই ঘটনায় তদন্তে নেমে পুলিশ গরু পাচারকারীদের কারবার বলে জানাতে পারে। শেষে একজন গরু পাচারকারীকে আটক করা হয়। এবার গোয়ালটুলি এলাকার আরেক চাষীকে কুপিয়ে খুন করা হল। এই খুনের ঘটনা জ্যোতিনগর থেকে মাত্রা ৫০০ মিটার দূরে। তাই এই খুনের পেছনেও গরু পাচারকারীরা থাকতে পারে বলেই সন্দেহ পুলিশ ও এলাকাবাসীর।
গোয়ালটুলি রোড সংলগ্ন এলাকাতেই কৃষক বিনয় বসুর জমি রয়েছে। সেই জমির কিছু অংশে বেগুন লাগানো হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যার পর সেই বেগুন তুলতে যান বিনয়বাবু। সেখানে রাতের অন্ধকারে তার উপর হামলা হয়। এরপর ওই জমিতেই ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে খুন করে ফেলে রাখা হয় তাকে। পরিবারের লোকেরা পরে জানতে পেরে পুলিশকে জানায়। ফাঁসিদেওয়া থানার পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
পরিবারের লোকেরা বলেন, তাদের কোন শত্রু নেই। কিন্তু গরু পাচারকারীরা তাদের জমির উপর দিয়ে গরু নিয়ে যেত। এতে নষ্ট হচ্ছিল জমির ফসল। তার প্রতিবাদ করেই হয়তো ওই দুষ্কৃতীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে। মাস দুয়েক ধরে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ফাঁসিদেওয়ায় গরু মাফিয়াদের দাপট বেড়েছে। এলাকাবাসীরা বলেন, এর আগে এমন ঘটনা এখানে ঘটেনি। খুন হওয়া কৃষক বিনয় বসু নিপাট ভদ্র মানুষ। তিনি খুন খুন হয়েছেন তা ভাবা যাচ্ছে না। এনিয়ে দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধ করে গরু পাচার বন্ধ করা এবং পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি করেন বাসিন্দারা। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, চোরা করবারিরা দাপাচ্ছে। ফসল নষ্ট করে বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে গরু। এসব বন্ধে উদ্যোগ নেই কারও। এখন প্রাণ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। যদিও কৃষক খুনের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে ফাঁসিদেওয়া থানার পুলিশ। এদিন সকালে গোটা এলাকা কুকুর নিয়ে তল্লাশি চালায় ডগ স্কোয়ার্ড।‌

© গিরিশ মজুমদার, ঋষি চ্যাটার্জী ও রাজকুমার রায়।