ফাঁসিদেওয়ায় এক ছাতার তলে ১২১ জনের বিয়ে

শিলিগুড়ি, ৬ ডিসেম্বর

এক ছাতার তলে ১২১ জনের বিয়ে। দেখা মিলল শিলিগুড়ির কাছেই। শুক্রবার। আর্থিক অভাবে বিবাহের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করতে সাহস পাচ্ছিলেন না তাঁরা। সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলোয়নি তাদের। এমন ১২১ জোড়া যুবক–যুবতী ও দম্পতির গণবিবাহ হল শিলিগুড়ির কাছে ফাঁসিদেওয়ার আদিবাসী মহল্লায়। একসঙ্গে এতগুলো বিয়ের আয়োজন করে নজির গড়ল শিলিগুড়ি শাখার শ্রীহরি সৎসঙ্গ। শুক্রবার মুণি চা বাগানে হয় এই গণবিবাহের জাঁকজমক অনুষ্ঠান। সেখানে হাজির থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি নব দম্পতিদের নতুন জীবনের জন্য আর্শিবাদ করেন।
অনেক আগে থেকেই দিন ঠিক করা ছিল। এদিন তাই নির্দিষ্ট আচার-বিধি মেনে এই বিবাহের আয়োজন করা হয়। এজন্য বড় করে প্যান্ডেল করা হয়। এরপর সেই প্যান্ডেলের ভেতরে পরপর বসানো হয় ১২১জোড়া আদিবাসী যুবক–যুবতী ও দম্পতিকে। আদিবাসী সমাজের রীতি অনুযায়ী বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়। নব দম্পতিদের বাসনপত্র, শাড়ি সহ বিভিন্ন দানসামগ্রীও দেওয়া হয়। আগত অতিথিরা দম্পতিদের পুষ্পস্তবক দিয়ে মঙ্গল কামনা করেন। পাশাপাশি চলে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য রান্নাবান্না। বিয়েতে বাজে সানাই, চলে আদিবাসী মহিলাদের নৃত্য।
এদিনের অনুষ্ঠানে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সভাপতি রঞ্জন সরকার, গণবিবাহের আয়োজক শ্রীহরি সৎসঙ্গ সমিতির সভাপতি গৌরি শংকর গোয়েল, সম্পাদক দামোদর শর্মা। এদিন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব স্থানীয় শিবমন্দির এলাকায় এই বিবাহ আসরের উদ্ধোধন করেন। নব দম্পতিদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‌এই বিবাহের সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে। এদিন থেকে এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের ১২১ জোড়া দম্পতির নতুন করে চলার পথ শুরু হল।’‌ এদিন তিনি আরও বলেন, ‘‌সামাজিক ও আর্থিকভাবে আদিবাসীদের তুলে ধরার কাজ করছে রাজ্য সরকার। এদিন এই অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ এসেছেন। সামাজিক এই কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানাই আমি। এই দম্পতিদের নতুন জীবনের প্রতি শুভদিনে শুভকামনা রইল।’‌ সাধারণত আদিবাসী সমাজের অনেকেই গ্রাম্য মেলায় ‘মনামুনি’ বা পছন্দ করে করে সংসার শুরু করেন। অনেকের সন্তানও হয়। কিন্তু সামাজিক বিয়েটা আর্থিক কারণে করে উঠতে পারেন না। এতে আদিবাসী সমাজ তাদের স্বীকৃতি দেয়না। ফলে কোনও মন্দিরে যেমন তাদের প্রবেশাধিকার ছিল না, তেমনি কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারতেন না তাঁরা। এবার সেই দম্পতিদের বিয়ে হওয়ায় সব বাধা উঠে গেল। শ্রীহরি সৎসঙ্গ সমিতির সভাপতি গৌরি শংকর গোয়েল বলেন, ‘‌চা বাগানের নানা সমস্যায় আর্থিকের কারণে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে পারেন না। সেই যুবক–যুবতীর বিয়ে দেওয়া হল। একইভাবে আগে বিয়ে করে অনেকে। তাদের আবার কিছু সামাজিক অনুষ্ঠান এবং মন্দিরে প্রবেশ থেকে বঞ্চিত থাকেন। এই বঞ্চনা থেকেই মুক্তি দিতে এদিন জাঁকজমকভাবে বিয়ে দেওয়া হল।’‌ আর এই বিয়েতে এসে খুশি আগতরা।