শিলিগুড়ি, ২১ ফেব্রুয়ারি: উত্তরবঙ্গে সম্ভবত প্রথম বসবে এমন মূর্তি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো ছেলের লাশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের ম্লান, বিষণ্ন মুখের এই মূর্তি। মাতৃভাষা দিবসে এই মূর্তি বসল শিলিগুড়ির শিবমন্দিরে। স্থানীয় মেডিক্যাল মোড়ে এই আবক্ষ মূর্তি বসিয়ে মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিক সহ নাম না জানা অনেকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। শিবমন্দির এলাকার বাসিন্দা দুর্লভ চক্রবর্তী এই মূর্তি বসিয়ে তা এলাকাবাসীর জন্য উৎসর্গ করেন। শুক্রবার মাতৃভাষা দিবসে শোভাযাত্রা ও অনুষ্ঠান হয় সেখানে। ওই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দুর্লভবাবুর বাবা দুলাল চক্রবর্তী এই মূর্তির আবারণ উন্মোচন করেন।
এর আগে আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন জায়গায় মূর্তি বসানো হয়েছে। সেই সমস্ত মনীষীদের মূর্তি বসানোয় এগিয়ে আসেন দুর্লভবাবু। এলাকার কিছু জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছিল, আবার পরিত্যক্ত জায়গা পেয়ে সমাজবিরোধীদের আড্ডা জমছিল। সেই সমস্ত জায়গা সাজিয়ে তুলে বসানো হয়েছে মূর্তি। এবার এশিয়ান হাইওয়ে–২ এর পাশে জায়গা খোঁজা হয়। ওই জায়গাটিতেও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। নেশাখোরদের আনাগোনা বাড়ছিল। সেখানকার বাসিন্দাদের নিয়ে এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জায়গাটিকে সুন্দর রূপ দেওয়ার। সবার সম্মতি মেলে। তারপরই কাজ শুরু হয়। লোহার রেলিং দিয়ে জায়গাটি প্রথমে ঘিরে দেওয়া হয়। পুরো জায়গাটি পাকা করে দেওয়া হয়। বসানো হয় ভীত। আর ওই ভীতের উপর বসানো হয় ভাষা শহীদদের প্রতীকী মূর্তি। এই মূর্তিটি তৈরি করেছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী সুবীর পাল। এর আগে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে একুশের শহীদ মিনার বসানো হয়েছে। তবে এমন মূর্তি নেই এখানে। দুর্লভবাবু বলেন, ‘১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন অনেকে। প্রতিটি বাঙালির মনে স্থান করে নেওয়া ভাষা শহীদের স্মৃতিতে এই আবক্ষ মূর্তি। ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো ছেলের লাশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের ম্লান, বিষণ্ন মুখের এই মূর্তি ছবি ফুটে উঠেছে। অমর একুশের চেতনায় এখানে আগতরা এক মুহূর্তের জন্য হলেও ফিরে যাবেন ’৫২-এর রাজপথে।’