ড্রেনের জল পরিষ্কার করার বিরাট প্রকল্প হচ্ছে ফুলবাড়িতে

শিলিগুড়ি, ১৭ মার্চ: এমন একটি প্রকল্প যা দিয়ে ড্রেনের জল পরিষ্কার করা হবে। হাজার হাজার ড্রেনের জল জমা হবে প্রকল্পে। এতদিন নদীতেই মিশেছে ড্রেনগুলো। আর তাতে নদী হয়ে গেছে দূষণ। শিলিগুড়ি শহর দিয়ে চলে যাওয়া নদীগুলো তাই বড় ড্রেনের আকার নিয়েছে। যেন আবর্জনার ভাগার। তাতে নদীগুলো যেমন দূষিত হয়ে পড়েছে। তেমনি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এই নদী বাঁচাতে অনেক আগেই বিশেষে পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যার নাম সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট। তার প্রকল্প করা শুরু হয়েছে শিলিগুড়িতে দুটি। একটি ফুলবাড়ির সিপাইপাড়া। অন্যটি নৌকাঘাট এলাকায়।

বাম আমলে প্রাক্তণ পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের হাত দিয়ে সূচনা হয়েছিল মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের অন্তর্গত সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের। মূলত মহানন্দা নদীকে দূষণমুক্ত করতেই কেন্দ্রের সহায়তায় এই প্রকল্পের ভাবনা নিয়েছিল বিগত বাম সরকার। মহানন্দা একশন প্লান্ট।

তবে ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পর শিলিগুড়ি নৌকাঘাট সংলগ্ন মহানন্দা নদীর চর ঘেঁষে তৈরি হওয়া এই সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘ কয়েকবছর এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার পর অবশেষে বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে শুরু হতে চলেছে মহানন্দা সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।

শুক্রবার নতুন করে এই কাজের শিলান্যাস করেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। ফুলবাড়ি সিপাহী পাড়া ও নৌকাঘাটে এদিন মেয়র জানান, শহরের নোংরা জল পরিশ্রুত করে মহানন্দা, জোড়া পানি ফুলেশ্বরী নদীতে ফেলে নদীকে দূষণমুক্ত রাখার জন্যই এই পরিকল্পনা। ৬৭ শতাংশ রাজ্য ও ৩৩ শতাংশ কেন্দ্রের সহোযোগিতায় ২ ও ৩ প্রকল্পের কাজ শুরু হল।
প্রথম পর্যায়ে ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজের সূচনা হল। মোট ২৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সমগ্র প্রকল্পের কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

যদিও এই কাজের মূল দায়িত্ব থাকছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (‌কেএমডিএ) ওপর‌। শিলিগুড়ি পুরনিগম নোডাল এজেন্সি হিসেবে কাজ করবে। এসটিপির মূল কাজ হবে গোটা শহরের নোংরা জল পরিশোধিত করা, তারপর সেই পরিশোধিত জল নদীতে ফেলা। এতে করে নদী আর দূষিত হবে না। আপাতত ৩টি এসটিপি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এসটিপি-‌২ ও এসটিপি-‌৩ এর শিলান্যাস এদিনই করা হল। এসটিপি-‌১ এর জন্য জায়গা দেখা চলছে। পোড়াঝাড়ে একটি জায়গা দেখাও হয়েছে। জায়গা ঠিক হলে সেটির কাজও শুরু হয়ে যাবে বলে জানান মেয়র। এসটিপি-‌২ এর কাজ শুরু হল নৌকাঘাট এলাকার শীতলাপাড়ার কাছে। যার জন্য খরচ হবে প্রায় ৬৪ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা এবং এসটিপি-‌৩ এর কাজ শুরু হল ফুলবাড়ির সিপাহীপাড়ায়। এর জন্য খরচ হবে ১৮ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা।


উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে প্রথম এই কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু নানাকারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিনে সেটা নিয়ে আর তৎপরতা ছিল না। মেয়র হিসেবে গৌতম দেব দায়িত্ব নেবার পর নতুন করে উদ্যোগ নেন এবং এদিন নতুন করে কাজ শুরু করলেন। জানা গেছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এক রিপোর্ট জানা যায়, মহানন্দায় কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ বেড়েছে। নদীতে সরাসরি প্রাণীর দেহাংশ কিংবা নিকাশির নোংরা জল মিশলে এই ব্যাক্টেরিয়া বেড়ে যায়। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। একই ছবি তৈরি হচ্ছিল ফুলেশ্বরী ও জোড়াপানি নদীতে। শিলিগুড়ি শহরের ১০৮টি নিকাশিনালা সরাসরি যুক্ত আছে মহানন্দা নদীর সঙ্গে। এই নিকাশির জল এসটিপি-‌২ তে নিয়ে সেটা শোধন করে নদীতে ফেলা হবে। ফুলেশ্বরী ও জোড়াপানি নদীর জন্য কাজ করবে এসটিপি-‌৩। এদিনের শিলান্যাসে ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার, মেয়র পারিষদ মানিক দে, দুলাল দত্ত, দেবাশিষ প্রামানিক, প্রধান দিলীপ রায়