গ্লাস লাগাতে গিয়ে দুইতলা থেকে পরে এই যুবকের মৃত্যু

শিলিগুড়ি ও গুরগাঁও, ২৯ ফেব্রুয়ারি: হরিয়ানার গুরগাঁও এ কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল শিলিগুড়ি সংলগ্ন মাটিগাড়ার এক যুবকের। নাম সঞ্জয় ঘোষ। গুরগাঁও একটি ভবনে কাচের জানালা লাগানোর কাজ করতেন সঞ্জয়। দুবাইয়ের একটি কোম্পানির হয়ে কাজ করতেন এই যুবক। তিন দিন আগে কাজ করতে গিয়েই আচমকা দুই তলা থেকে ছিটকে পড়েন নিচে। দুমড়েমুচড়ে ভেঙে যায় শরীরের হাড়গোড়। অন্যান্য শ্রমিকরা এবং ওই সংস্থার কর্মীরা সঞ্জয়কে নিয়ে যায় প্রথম একটি নার্সিংহোমে। সেখানে তড়িঘড়ি তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। কিন্তু বাঁচানো যায়নি সঞ্জয়কে। নার্সিংহোমে অপারেশন থিয়েটারে মৃত্যু হয় এই যুবকের। এই দুর্ঘটনায় দক্ষিণবঙ্গের কালনার এক যুবকও ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়। জানা গেছে, কাজ করার সময় সেফটি ক্লিপ লাগাননি ওই যুবক। সাধারণত নিচু ভবনে কাজের ক্ষেত্রে শ্রমিকরা এই ক্লিপ লাগান না। একইভাবে সঞ্জয় ভরসার জোরেই সেদিন সেপটি ক্লিপ লাগাননি। আচমকাই গ্লাস খুলে যায় এবং ছিটকে পড়েন সঞ্জয় ও আরো দুজন শ্রমিক। তারমধ্যে অন্য জনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। সঞ্জয় মৃত্যু হয় নার্সিংহোমে।এদিকে নার্সিংহোমে দুদিন মৃতদেহ রাখার পর খরচ বেড়ে যাচ্ছিল। শেষে সেখানকার পুলিশের সহায়তা নিয়ে গুরগাঁও সরকারি হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখা হয় দেহ। কিন্তু সেখানেও দেহ কার্যত বেওয়ারিশ হয়ে পড়েছিল। বিষয়টি ওই সংস্থার আরেক কর্মী সমিরন মালো এবং আরো কয়েকজন কর্মী ঠিকানায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।
সঞ্জয়ের কাছে একটি আধার কার্ড ছিল। তাতে শিলিগুড়ি মাটিগাড়ার কাছে রামকৃষ্ণ পাড়ায় ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে। সেখানেও যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু এই যুবকের পরিচয় সঠিকভাবে কেউ দিতে পারছিল না। এখনো মৃতদেহটি গুরগাঁও এর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। তিন দিন ধরে এই যুবককে দেহ ফিরিয়ে দিতে যোগাযোগ করছেন সমীরণ মালো নামে একযুবক। সেও একই সঙ্গে কাজ করতেন। সমিরন বাবু ফোনে “হেডলাইন নিজউজেকে” জানান, দেড় বছর ধরে গুরগাঁও এর কাছে একটি বাড়িতে মেস করে থাকত সঞ্জয়। একাই থাকতো সে।
এদিকে গুরগাঁও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই দুর্ঘটনায় একটি মৃতদেহ কলকাতায় উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। কিন্তু সঞ্জয় এর দেহ এখনো পড়ে রয়েছে মর্গে। এদিকে দুবাইয়ের ওই কোম্পানির পক্ষ থেকেও চাইছে এই যুবকের দেহ পরিবারের সদস্যদের হাতেই যাবতীয় ক্ষতিপূরণ ইন্সুরেন্স সহ অন্যান্য বিষয় মিটিয়ে তুলে দিতে চাইছে। কিন্তু কেউ যোগাযোগ না করায় সমিরনবাবু শেষে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিস্তারিত জানিয়ে পোস্ট করেন। পরবর্তীতে মাটিগাড়া থানা থেকে যোগাযোগ করা হয়। গুরগাঁও পুলিশকে মাটিগাড়া পুলিশ জানিয়েছে, এই যুবক কয়েক বছর আগে স্থানীয় এক বধুকে নিয়ে চলে যায় পরবর্তীতে মামলা হয় সঞ্জয় আর ফিরে আসেনি।
এদিকে অনেকে সঞ্জয়কে চিনি বলে সমীরণ বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। মাটিগাড়া এলাকায় কোন একটি দোকানে কিংবা হোটেলে সঞ্জয় কাজ করতো বলে অনেকে জানিয়েছে। কিন্তু মৃতদেহ ফিরিয়ে নিতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না ফলে বিপাকে পড়ছেন সমিরনবাবু। তিনি চাইছেন, অন্তত কেউ এসে দেহটি ফিরিয়ে নিয়ে যাক এবং কোম্পানির থেকে প্রাপ্য বীমা এবং অন্যান্য ক্ষতিপূরণ নিয়ে পরিবারটিও যাতে কোনভাবে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সে বিষয়টি আবেদন রাখেন তিনি।
©গিরিশ মজুমদার