শিলিগুড়ি, ১৩ মার্চ: করোনা ভাইরাস নিয়ে সজাগ রাজ্য সরকার। আগাম সর্তকতা অবলম্বনে তাই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে নুতুন পদক্ষেপ। এই মারণ ভাইরাসের মোকাবিলায় অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি খুলতে চলেছে রাজ্য সরকার। এখন সন্দেহজনক কোন রোগীর ন্যাজোফাইনসিয়াল সোয়াপ এবং রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য কলকাতার নাইসেড ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে হবে না। এখানেই তার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এবার থেকে গোটা উত্তরবঙ্গে কারও মধ্যে করোনার উপসর্গ ধরা পড়লে পরীক্ষা করে অতিদ্রুত সহায়ক চিকিৎসা শুরু করা হবে। এতে একদিকে একাধিকের শরীরে ছড়ানো আটকানো যাবে। তেমনি আগে থেকে চিকিৎসা শুরু করলে আক্রান্তের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ানো যাবে।
এর আগেই মেডিক্যালের আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। ৬টি বেড সেখানে রয়েছে। ওই ওয়ার্ডে বিশেষ ফিল্টার প্রযুক্তিযুক্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা জোড়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে নোডাল টিম। এই টিমে একজন সহকারি সুপার, একজন চিকিৎসক ও একজন ডিএনএস রয়েছেন। এর আগে দুজনকে এই আইসোলেশন রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন বিদেশে গবেষার জন্য গিয়ে ফিরে আসেন। সব মিলিয়ে ৫ জনের নমুনা কলকাতায় বেলেঘাটায় পাটানো হয়। সেখান থেকে প্রত্যকের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু শিলিগুড়ি যেহেতু উত্তর পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার। নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারতের সিকিম রাজ্য পার করে চিন সীমান্ত রয়েছে। প্রচুর দেশ বিদেশি পর্যটরদের আনাগোনা। তাই এখানে করনো নিয়ে বাড়তি সতর্কতা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নিয়ম হল, এ পরীক্ষার জন্য রোগীর লালা, শ্লেষ্মা বা কফ সংগ্রহ করতে হবে। মুখের লালা বা নাকের শ্লেষ্মার আরটি-পিসিআর (রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন) টেস্ট করলেই বোঝা যায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আছে কি না। মুখের লালা ও নাকের শ্লেমা সংগ্রহ করা টিউব অতিমাত্রায় শীতল করে বরফের বাক্সে ভরে পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে। সেখানে টেস্ট কিট দিয়ে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। রোগীর নমুনায় যদি করোনা ভাইরাস থাকে, তাহলে এ পরীক্ষায় তার সংখ্যা বাড়বে। ফলাফল আসবে ‘পজেটিভ’। এই ফলাফল পেতে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। কলকাতা দূরবর্তি। পথেই অনেক সময় যায়। তারপর সেখানেও ভিড়। এই সমস্ত দিক ভেবেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ল্যাব খোলার সিদ্ধান্ত। পরবর্তিতেও ল্যাবে এই ধরণের নতুন ভাইরাস জনিত রোগ নির্ণয় করা যাবে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যক্ষ সঞ্জীব মল্লিক বলেন, ‘করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সবরকমের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কিছুদিনের মধ্যেই এখানে নতুন পরিষেবা চালু হতে চলেছে।’ হাসপাতালের সুপার কৌশিক সমাজদার বলেন, ‘আশা করি কিছু দিনের মধ্যেই এখানে নমুনা পরীক্ষা চালু হবে। আমাদের আর কলকতার নাইসেডে ছুটতে হবে না।’
©গিরিশ মজুমদার