ইস্ট ওয়েস্ট করিডরের কাজ থমকে এই কারণেই

শিলিগুড়ি, ২৬ ফেব্রুয়ারি: পূর্ব পশ্চিম মহা সড়কের জন্য জমি দিয়ে ক্ষতিপূরণের মামলায় জিতলেন ফুলবাড়ির জমিদাররা। সেই সঙ্গে ঘরবাড়ি সরানো সংক্রান্ত আরবিট্রেশন মামলায় জমিদার’দের পক্ষে যায়। এবার এই ক্ষতিপূরণের মামলার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে যায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। যে কারণে আবারও পিছিয়ে গেল পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের কাজ। শিলিগুড়ির কাছে ফুলবাড়ি দিয়ে চার লেনের মহাসড়ক চলে যাচ্ছে অসম হয়ে মায়ানমার সীমান্তে। এই রাজ্যে ঘোষপুকুর, ফুলবাড়ি, ধুপগুড়ি, ফালাকাটা, আলিপুরদুয়ার কোচবিহার কাজ চলছে। অথচ এই পথে বেশ কয়েক জায়গায় জমিজট রয়েছে। তার মধ্যে শিলিগুড়ি কাছে ফুলবাড়ি মহানন্দা ব্যারেজ থেকে আমাই দীঘি হয়ে জিয়াগঞ্জ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ নিয়ে সমস্যা। ফুলবাড়ি বাজার, গঠমাবাড়ি, আমাই দীঘি এলাকায় জমি দাতারা জমি দিতে ইচ্ছুক। কিন্তু দেখা গেছে, বাজারদরের তুলনায় অনেক কম দেওয়া হচ্ছে তাদের দাম। প্রায় ১৫০ জনের মধ্যে ৩০ শতাংশ জমিদাতা বাধ্যহয়ে ক্ষতিপূরণ পেলেও আরবিট্রেশনে গিয়েছেন তারা। বাকি ৭০ শতাংশ জমিদাতা বাজারদরে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলায় যান। তারা জানিয়েছেন আমরা সবাই জমি দিতে প্রস্তুত। কিন্তু যে দাম দেওয়া হচ্ছে তা বাজারদর নয়। অথচ ফুলবাড়ি খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। অনেক দাম জায়গার। ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া সেই দাম দিয়ে অন্যত্র জায়গা কিনতে পারবেন না। তাই তারা বাজারদরে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন। পাশাপাশি আর্বিট্রেশনে যান। এ মামলায় রায় দিয়েছে আদালত। তাতে জমিদাতাদের পক্ষে গেছে বলে জানাগেছে। বলা হয়েছে বাজারদরে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে। এবার জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবার মামলায় গেছে। ঘোষপুকুর থেকে ফাঁসিদেওয়া হয়ে মহানন্দা ব্যারেজ পর্যন্ত রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তারপরে গঠমাবাড়ির হয়ে কাজ বন্ধ। সড়কের নানা বিষয় নিয়ে এবার পর্যটনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কলকাতার আধিকারিকরা। এদিন মৈনাকে বৈঠক হয়। বৈঠকে পর্যটন মন্ত্রী বলেন, এখানে বাসিন্দারা কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত হন। এশিয়ান হাইওয়ে, হাউসিং ডিপার্টমেন্ট এ জমি দিয়েছিলেন।আর তারা ক্ষতির মুখে পড়তে চান না। তাই বাজার দরে যাতে দাম দেওয়া হয় সে বিষয়টি ভাবতে হবে। বিষয়টি যেহেতু হাইকোর্টে গিয়েছে তাই আমাদের জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি যাতে মামলাগুলো তাড়াতাড়ি মিটিয়ে ফেলা হয়। এব্যাপারে সরকারি আইনজীবীদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। আমরা চাই রাস্তাটি তাড়াতাড়ি তৈরি হোক।
এর আগে ইসলামপুরে ১০ কিলোমিটার রাস্তায় সমস্যা ছিল। সেই ইসলামপুর বাইপাস হয়ে রোড গিয়েছে।সেখানে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে সেই কাজও সম্পন্ন হয়েছে। তবে ইলুয়াবাড়িতে একটি ধর্মীয় স্থান জায়গা দেওয়া হবে। এনিয়ে খুব শিগগিরই বৈঠক করা হবে। এদিকে ফুলবাড়ির এই সমস্যা নিয়েও বৈঠক করবেন মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার জাতীয় সড়ক এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকরা ফুলবাড়ি ব্যারেজ ও বাকি জায়গা ঘুরে দেখবেন। ব্যারেজের মুখে ও বাজার এলাকায় কিছু দোকানপাট রয়েছে তা সরানো নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি বৈঠকও হবে শিলিগুড়িতে।
একইভাবে ধুপগুড়ি থেকে ফালাকাটা পর্যন্ত প্রায় ৩১ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলছে। তার মধ্যে ১০ কিলোমিটার রাস্তার সমস্যা বেশি। এই ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ৪ কিলোমিটারের ঝামেলা মিটেছে। কিন্তু এখনো ৬ কিলোমিটারে ঝামেলা হয়ে রয়েছে। সেনিয়ে সেখানকার গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জমিদাতা এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন গৌতম দেব। আরেকটি ধাপ রয়েছে ফালাকাটা থেকে সলসলাবাড়ি পর্যন্ত। সেখানে জমিজট রয়েছে। ৪১.৬৫ কিলোমিটার এই পথে ৩১ কিলোমিটার পড়েছে আলিপুরদুয়ার জেলায় এবং ১০ কিলোমিটার পড়েছে কোচবিহার জেলায়। এই আলিপুরদুয়ার জেলাতেও বেশকিছু জায়গার ক্ষতিপূরণ প্রদান নিয়ে রয়েছে জটিলতা। ফালাকাটার কাছে কাদম্বিনী চা-বাগান এলাকাতেও কিছু বসতি রয়েছে সরকারি জায়গার উপর। এই বসতি সরানো নিয়ে কথা বলা হবে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে।
জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় বেশ কিছু অংশে জমিজট হয়ে রয়েছে। দু’ধরনের সমস্যা রয়েছে। কোথাও জমি অধিগ্রহণ হয়েছে কিন্তু জমিদাতারা ক্ষতিপূরণ বৃদ্ধির দাবিতে মামলা করেছেন। আবার কোথাও জমি অধিগ্রহণ করতেই বাধা দিয়েছেন জমিদাতারা। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, কবে জমির সমস্যা মিটবে তার অপেক্ষায় বসে থাকলে সড়কের কাজ সম্পূর্ণ
করা যাবে না। কারণ যারা কাজের বরাত পেয়েছে ক্ষেত্রে নতুন করে টেন্ডারের প্রশ্ন আসবে। কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ফিরে গেলে সেই বরাদ্দকে আবার ফিরিয়ে আনাও যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ এবং বহু কাঠখড় পােড়াতে হবে। এর আগে এনিয়ে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসকদের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে সব এলাকায় এখনও অধিগৃহিত জমিতে দখল রয়েছে সেগুলি
উচ্ছেদ করা হবে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এ রাজ্যের মুখ্য জেনারেল ম্যানেজার আরপি সিংহ জানান ‘পুরাে জমিই আমাদের হাতে চলে এসেছে। তবে ক্ষতিপূরণের হার নিয়ে আপত্তি রয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রস্তাবিত সড়কের এলাকায়। প্রথমেই দখল উচ্ছেদ করা হবে। ক্ষতিপূরণ বৃদ্ধির দাবিতে যেখানে মামলা হয়েছে সেখানেও উচ্ছেদ হবে। পরে আদালত যে নির্দেশ দেবেন তাই মানা হবে।’ এই পদক্ষেপ ছাড়া সড়কের কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে দাবি তার। আগামী ডিসেম্বরে এই অংশের কাজ শেষ হবে বলে ধরা হয়েছে। পরের দুই অংশ ধূপগুড়ি থেকে ফালাকাটা এবং ফালাকাটা থেকে সলসলাবাড়ি পর্যন্ত সড়কের ভবিষ্যত আপাতত অন্ধকারেই রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার শিলিগুড়ি পর্যটন ভবনে গৌতম দেব জাতীয় সড়কের আধিকারিদের সহানুভূতি দিয়ে ভাবতে বলেন। তাদেরকে অনুরোধ করেন কেউ বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে যাতে রাস্তাটি কাজ সম্পন্ন করা যায়। সমস্ত দিক দেখেই যেন মেটানো হয়। এব্যাপারে যৌথ বৈঠক করার কথা বলেন মন্ত্রী। এতে সমস্যা মিটে যাবে বলে বিশ্বাস অনেক জটিলতা কেটেছে আবারো ছোট ছোট জটিলতাগুলো কেটে উঠবে যৌথ বৈঠক করেই তা মেটাতে হবে।
উল্লেখ্য, গুজরাতের পোরবন্দর থেকে অসমের শিলচর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার চার লেনের পূর্ব পশ্চিম মহাসড়ক। বিহার থেকে ইসলামপুর হয়ে উত্তরবঙ্গে ঢুকেছে। শিলিগুড়ি লাগোয়া ঘোষপুকুর বাইপাস হয়ে ৩১ডি জাতীয় সড়ক ধরে ফুলবাড়ি-জলপাইগুড়ি-ধূপগুড়ি বাইপাস-আলিপুরদুয়ারের সলসলাবাড়ি হয়ে অসমে ঢুকবে। দেশের অন্য প্রান্তে মহাসড়ক তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেলেও, ঘোষপুকুর থেকে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার সড়ক চালু করা বাকি রয়েছে।